সাক্ষাৎকারে পাঠভবন

“.. পাঠভবন ‘না’ শব্দে বিশ্বাসী নয়..”
বাংলা ভাষা, সাহিত্য থেকে শুরু করে বাঙালি, বাঙালীয়ানা, রবীন্দ্রনাথ, পাঠভবন এইসব কিছু নিয়েই একান্ত সাক্ষাৎকারে পাঠভবনের বাংলার শিক্ষক শ্রী সঞ্জীব বসু। আলাপচারিতায় একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী অবন্তী নাহা।
অ: স্যার আজকে আপনাকে আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দেওয়ার জন্য।
স: ধন্যবাদ, সকলকে আমার প্রণাম।
অ: সময় নিয়ে যখন কথা বলছি তখন একটা প্রশ্ন না করে পারছি না। ছোট থেকেই দেখে আসছি ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা আর সঞ্জীব স্যার সমানুপাতে চলছে। কোনোদিন এতটুকুও দেরি হয়নি। এতদিন ধরে একই ভাবে মেইনটেইন করছেন কিভাবে? আপনাকে দেখে তো ভারতীয় রেলের শেখা উচিত…
স: (মৃদু হেসে)তিনটে কথা আমি বলতে চাই। এক হচ্ছে, কাজের প্রতি ভালোবাসা দুই দায়বদ্ধতা আর তিন অন্যের সময়কেও গুরুত্ব দেওয়া। তুমি যদি অন্যের সময় কেও গুরুত্ব দাও তাহলে নিজের সময়ের প্রতি তুমি দায়বদ্ধ থাকবে। এই তিনটে বিষয় আশা করি সবাই মেনে চলবে। তাহলেই পারবে।
অ: স্যার এত বিষয় রয়েছে তবুও কেন বাংলাকে বিষয় হিসেবে বেছে নিলেন? বাংলার প্রতি ভালোবাসা কি প্রথম থেকেই?
স: এই পরিবর্তন আমার আসে উচ্চ-মাধ্যমিকের পর। আমি বি. এস. সি তে ভর্তি হয়ে গেছি কিন্তু আমার একজন শিক্ষক, এত বছর পরেও তাঁর কথা স্মরণ করছি; শ্রীরামপুরের বিখ্যাত ‘নন্দলাল ইনস্টিটিউশন’ এর শিক্ষক ডক্টর অজিত কুমার সরকার আমাকে বলেছিলেন, “তুই হচ্ছিস প্রকৃত সাহিত্যের ছেলে….” এবং ওই ইনস্টিটিউশন থেকেই আমি উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই আমার সাহিত্য পড়তে ভীষণ ভালো লাগতো, তাই বাবার সাথেও আলোচনা করি। বাবা বলেছিলেন, যার যেদিকে ভালোবাসা তার সেটাই করা উচিত। তো আমি সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আমি বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করব।
অ: বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা কি ছোট থেকেই?
স: ছোট থেকেই, কারণ আমি বাংলা নিজে থেকেই লিখতাম। বাংলা পড়ার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যতীত আমার আর কোনো ব্যক্তির সহায়তা লাগেনি এবং সেটা একেবারে স্নাতোকোত্তর পর্যন্ত। সুতরাং যে বিষয়টা নিজের থেকেই আসে, যে বিষয়টায় অন্যের ওপর ভর করে এগোতে হয় না, সেই বিষয় নিয়ে এগোনোই ভালো। পাশাপাশি সাহিত্যের মধ্যে গোটা জীবনকে আমি যেভাবে খুঁজে পেয়েছি, যেভাবে মেলাতে পেরেছি সমাজ কে, বিশ্ব কে, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি জিনিসকে, সেটা আমাকে অভিভূত করে। সুতরাং আমি এই বিষয়টা বেছে নিতে দ্বিধা করিনি।
অ: স্যার পরবর্তী প্রশ্ন, ছাত্রজীবনে কোন বিষয় পড়তে সব থেকে বেশি ভালো লাগতো?
স: সাহিত্য পড়তে তো ভালবাসতামই। পাশাপাশি পছন্দের তালিকায় ছিল সাহিত্যের একবারে উল্টোদিকের সাবজেক্ট বায়োলজি। জীববিদ্যা আমার খুবই পছন্দের বিষয় ছিল। বরাবরই ভালো লাগতো।
অ: বাংলা সাহিত্যে আপনার সব থেকে প্রিয় সাহিত্যিক কে?
স: এইরকম ভাবে ‘প্রিয়’ বলতে খানিকটা দ্বিধা আছে। যেমন, মিষ্টির দোকানে থরে থরে সাজানো মিষ্টির মধ্যে কোন মিষ্টিটা তুমি খাবে আর কোনটা বাদ দেবে সেটা ঠিক করা বেশ কঠিন ব্যাপার (হাসি)। সবগুলির স্বাদ অনবদ্য। ঠিক সেই ভাবেই, বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় এক এক সাহিত্যিকের লেখার এক এক রকমের স্বাদ। কারো নাম একক ভাবে বললে মনে হয় অনেক ফাঁক এবং ফাঁকি থেকে যাবে। সুতরাং এই জায়গাটা এমন ভাবে বলা ঠিক হবে না। কারণ সমস্ত সাহিত্যিক তাদের নিজ নিজ স্টাইলে সাহিত্য রচনা করেন।
অ: স্যার তবুও একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করছে, এতো জনের মধ্যে কার লেখা বিশেষ ভাবে নজর কেরেছে?? রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিচ্ছি কারন রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আমরা পরে কথা বলব।
স: (একটু ভেবে) শরৎচন্দ্রের কথা বলা যেতে পারে। কারণ শরৎ সাহিত্য আমি যতটুকু পড়েছি তাতে এইটা বুঝেছি, জীবনকে উনি শুধু দেখেননি উনি যেভাবে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছেন তা অতুলনীয়। শরৎ সাহিত্য পড়তে গিয়ে আমার হৃদয় তোলপাড় হয়ে যায়। আমার মনে পরে, ছোটবেলায় যখন ‘অভাগীর স্বর্গ’ আর ‘মহেশ’ পড়ি, অজান্তেই আমার চোখে জল এসে গিয়েছিলো। তখন আমার অষ্টম কি নবম শ্রেণী হবে। সেই সময়েই আমার সংবেদনশীল মনের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের লেখার যে সংবেদনশীল প্রকাশ তার একটা সেতুবন্ধন হয়ে গিয়েছিল। ফলে তার লেখালেখির সাথে আমি বেশি মেলাতে পারি ।
অ: স্যার আপনি বলছেন ছোটবেলার ‘মহেশ’ পড়তে গিয়ে আপনার চোখে জল এসে গেছিল। আজকে আপনি এতটা রাস্তা অতিক্রম করেছেন। দৃষ্টিভঙ্গির কি কোন পরিবর্তন ঘটেছে? মানে সেই বয়সে যেই ভাবে মহেশ গল্পটিকে দেখেছেন আজ কি কোন পরিবর্তন এসেছে??
স: হ্যাঁ সে তো এসেছেই। সমাজ জীবন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসবেই। আমাদের সাহিত্য তো জীবন নিয়ে চর্চা করে ফলে সমাজের সাথে তারও পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই আমিনা, বছর দশেকের এক মাতৃহারা বালিকা, সে তার পিতার প্রতি, সংসারের প্রতি যে কতটা দায়বদ্ধ তা আমায় অবাক করে। আমি জানিনা আজকের কতজন দশ বছরের বালিকা এতটা বোধ সম্পন্ন বা এতটা সাংসারিক জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত বা তারা কতটা গভীর ভাবে অনুভব করতে পারে সাংসারিক জীবনকে। ফলে জীবনের তো বহু পরিবর্তন হচ্ছে তার প্রক্ষেপ সাহিত্যেও পড়বে আর সেটাই স্বাভাবিক।
অ: স্যার বর্তমান যুগের কোন সাহিত্যিকের লেখা আপনার নজর কেড়েছে?
স: অনেকেই আছেন। এখনকার যুগের (একটু ভেবে) কবিদের মধ্যে জয় গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্তর লেখা আমার ভীষণ ভালো লাগে। মৃদুলদার লেখা তো আমি ভীষণভাবে রিলেট করতে পারি। এদের আমার পড়তে বেশ ভালো লাগে।
অ: যদিও উভয়ের মধ্যে তুলনা হয় না। তবুও গঠনমূলক তুলনার ক্ষেত্রেই বলছি, কোথাও গিয়ে কি তাদের মান পড়েছে?
স: পরিবর্তনটা স্বাভাবিক। কারণ, সমাজের পরিবর্তন হয়েছে, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে সেই প্রেক্ষাপটে যে মানুষগুলো আসছে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে। তাই এই পরিবর্তন স্বাভাবিক। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোন তুলনামূলক আলোচনা এইভাবে করা সম্ভব নয়। জীবনের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তনশীল এবং সেই পরিবর্তন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও হয়েছে, গানের ক্ষেত্রে হয়েছে, সাহিত্যেও হয়েছে। এটা খুব স্বাভাবিক, এই পরিবর্তন একটা স্রোতের মতোন। সুতরাং এটা নিয়ে আর কোনো বিশেষ বক্তব্য নেই।
অ: সাহিত্যের পাশাপাশি এবার আসি পঠন-পাঠনের দিকে। মাধ্যমিকের পরেই অধিকাংশ পড়ুয়াদের সায়েন্স নিয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তার উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে তা আরো ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিষয় হিসেবে বাংলার ভাষায় গ্রহণ যোগ্যতা কমছে? বা কমতে পারে?
স: সেটা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক। পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায়, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রযুক্তি নির্ভর বা সরাসরি পেশাগত বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে বিষয় রয়েছে, সেই বিষয়গুলোর কদর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমরা পড়াশোনাটা শিখি কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য বা অর্থনৈতিকভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য। এই সাধারন সূত্রটা অস্বীকারের কোন জায়গা নেই। কাজেই পরিবর্তিত আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় সাহিত্য নিয়ে পড়ার বা কলা বিভাগে পড়ার চাহিদা কমবে এটাও স্বাভাবিক।
অ: উচ্চমাধ্যমিকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজির ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের ধারণা থাকে শেষ এক দু মাস পড়লেই ৯০% নম্বর পাওয়া সম্ভব। আদেও কি তাই?
স: না এটা একদমই ঠিক না। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে এটা বুঝেছি যে, ভালো নম্বর পাওয়ার বা সফল হওয়ার কোনো সহজ সমীকরণ নেই। হয়তো নম্বর পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে কিন্তু এইরকম কোনো ফর্মুলা নেই যে এক দু মাস পড়েই একজন পড়ুয়া ৯০% নম্বর পেয়ে যাবে। কিছু ক্ষেত্রে তা সম্ভব হলেও সেটা সম্পুর্ন ভাবে নির্ভর করে ছাত্র-ছাত্রীর ব্যক্তিগত মেধা ও ব্যক্তিগত লেখনী দক্ষতার উপর। এইটাকে জেনেরালাইজ করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। অনেক সহজ হয়েছে নম্বর তোলা কিন্তু এটা কোন সরলীকরণ সূত্রে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।
৫. ছাত্র-ছাত্রী দের বাংলা ও ইংলিশ এর প্রতি এই অবহেলা, এইটা নিয়ে আপনি কি বলতে চান?
স: দেখো, যে যে বিষয় নিয়ে পড়বে সেই বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ সবসময় বেশিই থাকে। এটা স্বাভাবিক। তবে আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর আগেও যেটা ছিল যে,উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হতে গেলে তাকে সর্বমোট নম্বরের উপর নির্ভর করতে হত। স্বাভাবিকভাবেই সর্বমোট নম্বরের ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজির বিশেষ ভূমিকা থাকতো। সুতরাং, তার যদি সর্বমোট নম্বর কমে যেত, সে ফিজিক্সে দক্ষ হলেও ফিজিক্সে অনার্স পড়তে পারতো না, অংকে দক্ষ হলেও অংক নিয়ে পড়তে পারতো না। কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গাটা অনেকটাই কমে গেছে। তবে এটাও ঘটনা, যে কোনো ভালো ছেলে মেয়ে কখনো কোনো বিষয়কে নেগলেক্ট করে না। কারণ আমি দেখেছি যারা অত্যন্ত মেধাবী তাদের কাছে সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সুয়োরানী কেউ দুয়োরানীর পর্যায়ে নেই। কেউ আদরনীয় কেউ অনাদরনীয় নয়। তাদের কাছে প্রতিটা বিষয় সমান।
অ: বর্তমানে অনেক পড়ুয়ারা পেশা ভিত্তিক পড়াশোনায় বেশি আগ্রহী। তবে যেসব ছাত্রছাত্রীরা বাংলা সাহিত্যে স্নাতক হওয়ার পরিকল্পনা করছে তাদের কাছে আজকের দিনে দাড়িয়ে ক্যারিয়ারে কি কি সুযোগ রয়েছে?
স: প্রথম হচ্ছে শিক্ষকতা। বাংলা শিক্ষকের চাহিদা চিরকালই থাকবে, এই নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ এটা আমাদের মাতৃভাষা। ভারতবর্ষে বাংলা যতই একটি প্রাদেশিক ভাষা হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গে মাতৃভাষার কদর মুছে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সুতরাং, বাংলা ভাষার শিক্ষক থাকবেই। এছাড়া সাংবাদিকতা এবং বিজ্ঞাপন জগৎ তো রয়েছেই৷ পাশাপাশি আমি দেখেছি সাহিত্যের প্রচুর ছেলেমেয়েরা ডাবলুবিসিএস এ ভালো রেজাল্ট করে সেদিকে কেরিয়ার তৈরি করছে। সুতরাং, বাংলা সাহিত্যে স্নাতক হওয়ার পর তার জন্য বিভিন্ন দিক খোলা রয়েছেই।
অ. অনেকেই মনে করেন বাংলা ভাষা বিপন্ন, বাঙালি বিপন্ন। কর্মক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া বা হিন্দি ভাষার আগ্রাসন-ই কি বাংলা ভাষায় বিপন্ন হওয়ার কারণ নাকি বাঙালি নিজেই সেই কারণ?
স: দুটোই আংশিক সত্য বলে আমার মনে হয়। কেন জানিনা, বাঙালি কে আমার সবচেয়ে আত্মবিস্মৃত জাতি বলে মনে হয়। এটা জেনে রাখা দরকার, বিশ্বের বহু ইউনিভার্সিটি তে বাংলা ভাষা পড়ানো হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই সারা বিশ্বের অধিকাংশ ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে। তাছাড়া বাংলা ভাষা কোনদিনই বিপন্ন হবে না কারন বাংলাদেশ নামে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র রয়েছে। তাদের একমাত্র ভাষা হল বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটা হয়তো কিছুটা আলাদা৷ আফটার গ্লোবালাইজেশন কর্মক্ষেত্রের যে ব্যাপ্তি হয়েছে, সেখানে হয়তো মাতৃভাষা না জানলে বা কম জানলেও পেশাগত দিক থেকে তার অসুবিধা হবে না। পাশাপাশি যে কথা খানিক আগেই বললাম যে বাঙালি একটা আত্মবিস্মরণের মধ্যে দিয়ে চলেছে এবং কেন জানিনা, এটাকে একটা “নাক উচু” ভাব বলেও অনেকে মনে করছে, যে বাংলাটা বেশি জানিনা। ইংরেজি যতটা জানি বাংলাটা ততটা জানিনা, এটা তার কাছে যতটা অপমানের যতটা অভিঘাতের তার থেকেও বেশি (পরিহাসের হাসি হেসে) এটা একরকম হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নিজের মাতৃভাষা সে জানে না, সেটা বলতে সে কোথাও কুন্ঠা বোধ করছে না। বরং অদ্ভুত এক সুখ অনুভব করছে।
অ. একটি আলোচনা সভায় গীতিকার চন্দ্রিল ভট্টাচার্য বলেছিলেন বর্তমানে হিন্দি থেকে বাংলা লিটারাল ট্রান্সলেশন হচ্ছে। এটাই কি নতুন যুগের trend?
স: হ্যাঁ কিছুটা তো বটেই। নতুনকে স্বাগত জানাতে আমার কোনদিনই কোনো কুন্ঠা নেই। কিন্তু সেই নতুন (একটু ভেবে) যেন দীর্ঘমেয়াদি কিছু ফসল সাহিত্যের ভান্ডারে, সংস্কৃতির ভান্ডারে তুলতে পারে। তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা আর দীর্ঘমেয়াদি ঐতিহ্যকে ধরে রাখার মধ্যে ফারাক আছে। সুতরাং এই ট্রেন্ড যদি সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করে তাহলে অসুবিধা নেই। কারন ভাষা পরিবর্তনশীল; ভাষার বিবর্তন হয়েছে যুগে যুগে। চর্যাপদের ভাষা থেকে আমরা আজকের ভাষায় এসেছি। কাজেই ভাষা পরিবর্তনশীল তাকে গ্রহণ করতেই হবে। সুতরাং এটার মধ্যেও কোন দ্বন্দের কিছু নেই।
অ: এখন দেখা যাচ্ছে নতুন কোনো বাংলা মাধ্যম স্কুল আসছে না। বেশিরভাগ ইংলিশ মিডিয়াম। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
উ: বর্তমানে একটা বিরাট বড় ব্যবসায়ী শ্রেণী ব্যবসার পুঁজি হিসেবে শিক্ষা কে ব্যবহার করছে। ফলস্বরূপ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তারা ট্রেন্ড যেদিকে থাকবে সেই দিকেই তাদের ব্যবসার অভিমুখ রাখবে। কারণ নগরায়নের যুগে, বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা একটা অন্যতম লাভজনক ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। বড় বড় পুঁজিপতিরা আজকাল শিক্ষায় লগ্নি করছে। তাই একজন লগ্নীকারি সে আর্থিক ফসল টাই বেশি বোঝার চেষ্টা করবে। সেই জন্য ইংলিশ মিডিয়াম এর ট্রেন্ড বেশি। এটা একটা দিক। দু’নম্বর দিক হচ্ছে যেটা একটু আগেই বললাম, যে প্রযুক্তি নির্ভর পড়াশোনার ক্ষেত্রে ইংরেজি অনেক বেশি জানা প্রয়োজন। সেইজন্য ইংলিশ মিডিয়াম এর এতো রমরমা।
অ: স্যার এতো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাঠভবন স্ব-মহিমায় চলছে। একজন শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আর পাঁচটা স্কুলের থেকে পাঠভবন আলাদা কিভাবে?
উ: একটাই বিষয় আমার মনে হয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করতে গিয়ে এইটা বুঝেছি যে, পাঠভবনের শিক্ষাদানের মধ্যে যে আন্তরিকতা লুকিয়ে আছে তা আর কোথাও নেই৷ ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এক আন্তরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। এটা অন্য কর্পোরেট স্কুলে খুবই কম আছে। আমাদের কাছে যে ছেলে মেয়েটি সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক বা প্রাপিকা আর যে ছেলে মেয়েটি তথাকথিতভাবে পিছিয়ে আছে (একটু থেমে) সত্যি বলতে, কেউ পিছিয়ে আছে বলে আমরা মনে করি না। পাঠভবন ‘না’ শব্দে বিশ্বাসী নয়। কারণ প্রত্যেকটি পড়ুয়া সমানভাবে আদৃত, তারা সমানভাবে আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। পাঠভবন এখনো পর্যন্ত ‘প্রথম’, ‘দ্বিতীয়’, ‘তৃতীয়’ বলে কোনো ক্যাটাগরি রাখে না। তবে কিছু বিষয়ে পাঠভবনের ‘না’ আছে। যেমন, পাঠভবন কলের পুতুল তৈরি তে বিশ্বাসী না৷ পুঁথিগত পড়াশোনায় পাঠভবনের বরাবরের না-পসন্দ। সর্বোপরি পাঠভবন শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী। এছাড়া আরও অনেক বিষয় আছে যা পাঠভবন কে অন্যদের থেকে অনেকটাই আলাদা করেছে।
অ: বিদ্যালয়ের উন্নতি প্রকল্পে আপনার কিছু প্রস্তাব।
স: আমার মতে, যারা নতুন শিক্ষক শিক্ষিকা হিসেবে আসছেন তাদের আরো বেশিকরে আন্তরিক হতে হবে, সংবেদনশীল হতে হবে। শিশুদের সমস্যা গুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তবেই সে শিক্ষার্থীর সমস্যা গুলি বুঝতে পারবে। সমস্যাটি শিশুর কাছে প্রকট না করে সেই সমস্যা সমাধানের রাস্তাটা শিক্ষকই তৈরি করবেন। তাহলেই পাঠভবনের যে স্বতন্ত্রতা, যা আমি একটু আগেই বললাম যে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর আন্তরিক বন্ধন, সেই জায়গাটা আরো সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অ: এত বছর পাঠভবনে আপনি শিক্ষকতা করছেন। পাঠভবন থেকে আপনি কি কি শিখলেন?
স: এইটাই যে কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের সাথে মিশতে হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলি এর আগে বহু বিদ্যালয়ে আমি কাজ করেছি, সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব ছিল। আমি এখানে এসে দেখলাম, বেশ কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা যারা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বেঞ্চে বসে গল্প করছে, একসাথে টিফিন খাচ্ছে। এই পরিবেশ আমি আর কোথাও দেখতে পাইনি। স্কুলে লোডশেডিং হলে গাছের তলায় বসে পড়ানো হতো। পাশাপাশি এও দেখেছি, রসায়ন পড়াতে পড়াতে কোনো শিক্ষক পড়ুয়া দের থেকে রসায়নের একঘেঁয়েমিতা দূর করার জন্য ভূতের গল্প বলছেন, ইতিহাস পড়াতে পড়াতে কোন শিক্ষক মজার গল্প করছেন, বাংলা পড়াতে গিয়ে আমি মাঝেমধ্যেই বাচ্চাদের দিয়ে গান করাই, কে কোথায় ঘুরতে গেছে সেইসব গল্প বলতে বলি, গোটা ক্লাস তা স্তব্ধ হয়ে শোনে। ছাত্র-শিক্ষকের এমন নিবিড় সম্পর্ক আর কোথাও নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে নিবিড় সংযোগের কথা বারবার বলে গেছেন। রাবীন্দ্রিক শিক্ষার এটাই বৈশিষ্ট্য, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তরিক মেলবন্ধন তৈরি হওয়া। এইটাই আমি পাঠভবন থেকে শিখেছি। এই নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এইজন্য পাঠভবন এর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।
অ: এমন কোন মন্ত্র বা উপদেশ যা আপনি আপনার শিক্ষকের থেকে শিখেছেন নিজে মেনে চলেন এবং নিজের ছাত্রছাত্রীদের বলেন?
উ: আত্মবিশ্বাস। আমার আর একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক ডক্টর বিমল মুখোপাধ্যায় কে আমি স্মরণ করছি। তিনি বলেছিলেন, “তুমি যখন মঞ্চে কিছু বলার জন্য উঠবে তখন তোমার সামনে কে বসে আছে, সেটা ভাবার মত অবকাশ নেই। কারণ তুমি সেটা ভাবলে আর কিছুই বলতে পারবে না। কত বিখ্যাত ব্যক্তিরা বসে আছেন। তুমি মনে করবে তুমিই সেরা, যখনই তুমি সেটা মনে করবে তখনই তুমি তোমার সর্বোচ্চ জায়গাটাকে অ্যাচিভ করতে পারবে।” এ বিষয়ে আমি স্বামী বিবেকানন্দের একটা কথা বলব। তিনি বলেছেন, superiority complex এবং inferiority complex দুটোই খারাপ। কিন্তু inferiority complex কে তিনি ‘পাপ’ বলতে অভিহিত করেছিলেন। কোন মানুষ যদি inferiority complex এ ভোগে তাহলে সে কখনোই কোন কিছু অ্যাচিভ করতে পারবেনা। আমি আমার জীবনে এটা কমবেশি অনুসরণ করে চলি এবং ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও এটাই আমার বার্তা।
অ: আপনার জীবনের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব কতটা?
স: এ তো প্রবন্ধ লিখতে হবে…
অ: ওই জন্যই শুরুতে আমরা বাদ দিয়েছি…
স: এ তো এক কথায় বলা সম্ভব নয়। সংক্ষেপে বলতে হলে আমি একটা জিনিস বলব, চলার পথে মাঝেমধ্যেই প্রতিকূলতার সামনে পড়েছি- পারিবারিক জীবন থেকে সামাজিক জীবন থেকে অর্থনৈতিক জীবন। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা বিখ্যাত গান আমি মনে মনে আওড়াই। “ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু/ পথে যদি পিছিয়ে পিছিয়ে পরি কভু/ এই দীনতা ক্ষমা করো / পিছন পানে তাকাই যদি কভু”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার বিভিন্ন জায়গায় উপনিষদের ‘চরৈবেতি’ মন্ত্রের প্রভাব পড়েছে। আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনেও পিছনের দিকে তাকিয়ে থাকার কোন অবকাশ নেই। সামনের দিকে এবং অবশ্যই সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলাই জীবনের ধর্ম। অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনায় রাবীন্দ্রিক প্রভাব বিষয়ে আমি এই জায়গাটিকে ফোকাস করছি।
অ: শিক্ষকতা না করতেন তাহলে কোন পেশার সাথে যুক্ত হতেন?
উ: দুটো বিষয়ে আমার খুব ইচ্ছা ছিল। প্রথম হচ্ছে সাংবাদিকতা এবং (একটু হেসে) অভিনয় জগতে আসার যে একটা ইচ্ছা ছিল না, তা নয়। সুযোগ হয়নি তাই এই পেশার সাথে যুক্ত হয়েছি ।
অ: দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন ছাত্রছাত্রীদের সাথে কাটানো বিশেষ কোন মুহূর্ত যা আপনার সারা জীবন মনে থাকবে?
স: সালটা ঠিক মনে নেই। বালি তে শুনলাম ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। সেই সময় পাঠভবনের একটা স্কুলবাস ডানকুনি থেকে বালি হয়ে শ্রীরামপুর পৌঁছাত। বিকেল ৪টের সময় স্কুল ছুটির পর ওই বাস টা যখন বালিতে এল তখন বাজে সন্ধ্যে সাতটা। বালি তে নেমে আমি আর সৌম্যজিৎ (সেই সময়ে ভূগোলের শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন) ট্রেন ধরে অনায়াসে বাড়ি চলে যেতে পারতাম। কারণ বৈদ্যবাটিতে আমার বাড়ি আর ওর ব্যান্ডেলে। সেদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এই বাচ্চাদের ছেড়ে বাস থেকে নামবো না। ওদের অনেকের বাবা বাইক নিয়ে বাসের কাছাকাছি চলে আসে, ওদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছিল। অবাক হয়েছিলাম এইটা দেখে যে, কোন বাচ্চা বাবাদের সাথে যেতে চাইছিলোনা। ঘন্টার পর ঘন্টা বেরিয়ে যাচ্ছে তবু ওরা কেউ বাস থেকে নামতে চাইছে না। পাশে ঝালমুড়ি ওয়ালা, ঝটপটি ওয়ালা আসছে; আমরা পয়সা দিয়ে তাদেরকে কিনে খাওয়াচ্ছি। তারা বসে গান করছে, নাচ করছে, হইহই করছে কিন্তু বাবাদের সাথে ফিরতে চাইছে না। সেই দিনটা আমি কোনদিনও ভুলতে পারবো না। চারটের সময় বেরিয়ে রাত নটায় শ্রীরামপুর পৌছালাম, কিন্তু এতে আমাদের মানসিক বা শারীরিক শ্রম হয়েছে বলে মনে হয়নি। সেদিন আমরা কেউ পরিশ্রান্ত হইনি৷ বরং, একটা সন্ধ্যে খুব সুন্দর ভাবে বাচ্চাদের মধ্যে আনন্দের সাথে কাটিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই এটা আমার কাছে বিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে।
অ: কর্মজীবনের শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবকদের মধ্যে কোন তফাৎ দেখেন?
উ: সে তো সময় সঙ্গে সঙ্গে তফাৎ হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত প্রায় ২৩ বছরের শিক্ষকতার জীবন, (একটু ভেবে) প্রথম দিকে ছাত্রছাত্রীরা মূলত শেখার জন্যই আসতো। অনেক কেই এমন পেয়েছি, তারা আজকে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত। তবে এই কথা বলতে আমার দ্বিধা নেই যে, আজকের অনেক অবিভাবকরা বাচ্চাদের থেকে ফাস্টফুডের মতো তাৎক্ষণিক ফল পেতে চাইছে । এক নম্বর কম পেয়েছে কেন এই নিয়ে অভিভাবক মিটিংয়ে যা শোরগোল পড়ে যায় তা আমাকে ব্যথিত করে, আমাকে ভাবায়। তিনি শুধু নম্বরকে পাখির চোখ করে রেখেছেন; তার বাচ্চাটা যে কেন এক নম্বর কম পেল বা কি করলে এক নম্বর সে বেশি পেতে পারে, সেই ভাবনাটার মধ্যে সে ঢোকার চেষ্টাই করে না। ফলে এই জায়গায় একটা মানসিক পরিবর্তন বিরাট ভাবে আমার নজরে পড়ে। এই নিয়েও একটা প্রবন্ধ লিখে ফেলা যায় বইকি।
অ: অবিভাবকদের উদ্দেশ্য যদি কিছু বলার থাকে…
স: আমি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, একটা বড় বিল্ডিং খুব দ্রুত তৈরি করা যায় না। আগে তার ভীতটাকে খুব মজবুত করতে হয়। আপনি যদি প্রথম থেকেই তার রংচং-এ ডেকোরেটেড প্রতিচ্ছবি দেখতে চান তাহলে সেটা ব্যার্থ হবে। যদি ভীতটা মজবুত না হয় তাহলে অচিরেই সেটা ধ্বসে যাবে। সুতরাং যাতে ভীত টা মজবুত হয় সেদিকে নজর দিন। এবং শিশুর মানসিক ও প্রকৃত জীবন-দর্শন যদি না পরিষ্কার থাকে তাহলে জীবনে সে হয়তো প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে, অনেক উচ্চ পদে আসীন থাকতে পারে কিন্তু যেটাকে আমরা শান্তি বা সুখ বলি সেটা সে খুঁজে পাবে না। সুতরাং আমরা কোনটা খুঁজছি, এই ক্ষুদ্র জীবনে সেটা আমাদের কিন্তু ভেবে নেওয়া দরকার। আমরা শুধুমাত্র উচ্চপদে অধিষ্ঠিত, প্রভূত অর্থবান হিসাবে সন্তান-সন্ততিকে দেখতে চাই না একজন সর্বাঙ্গসুন্দর, মানবিক ও সামাজিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসাবে দেখতে চাই – এই সম্পর্কে অভিভাবকদের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
অ: শিক্ষক সঞ্জীব বসু এবং ব্যক্তি সঞ্জীব বসুর মধ্যে কিভাবে মেলবন্ধন ঘটান?
স: এই মেলবন্ধন ঘটাতে গিয়েই তো যত অশান্তি হয়। যদি সব জায়গাতেই আদর্শের কথা বলি তাহলে সাংসারিক ক্ষেত্র কি মেনে নেবে?? (হেসে) ফলে বেশি আদর্শবান মানুষের সাংসারিক ক্ষেত্র খুব একটা সুখকর হয় না। মেলবন্ধন ঘটানো বেশ কঠিন, স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়ও পারেননি, আমি তো আণুবীক্ষণিক জীব।
অ: স্যার শেষ প্রশ্ন আত্মজীবনে লিখলে তার নাম কি দেবেন?
উ: ‘সদা থাকো আনন্দে, সদা রাখো আনন্দে’।